৩৪বছর পরেও কাঁদছে উপকূল

৩৪বছর পরেও কাঁদছে উপকূল; বুকে এখনও জেগে আছে সেই মৃত্যুর স্মৃতি

প্রকাশিত: ১০:২৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক – খবর আনোয়ারা 

দিনটি ক্যালেন্ডারে একটি সাধারণ তারিখ—২৯ এপ্রিল। কিন্তু চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি কেবল একটি দিন নয়, এটি এক ভয়াল স্মৃতির প্রতীক; এক মৃত্যুর উৎসবের দিন, যা বদলে দিয়েছিল হাজারো মানুষের জীবন।

৩৪ বছর আগে, ১৯৯১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সেই প্রলয়ংকরী ঝড়ে সরকারি হিসেবে প্রাণ হারান অন্তত ১৩ হাজার মানুষ, যদিও বেসরকারি হিসেবে সংখ্যাটি ছিল আরও বেশি।

রাতটা ছিল এক বিভীষিকাময় অধ্যায়—সাগরের বিশাল ঢেউ মুহূর্তেই গ্রাস করে নেয় গ্রাম, ঘরবাড়ি, শস্যক্ষেত আর হাজারো স্বপ্ন। যখন সকাল হলো, ভেসে উঠল লাশ, কান্না, হাহাকার আর নিস্তব্ধতার চিৎকার।

নুরুল আলম (৬০) তখন ছিলেন রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা বেড়িবাঁধ এলাকায়। তিনি আজও স্পষ্ট মনে করতে পারেন সেই ভয়াল রাতের শব্দ, ঢেউয়ের গর্জন, আর হারিয়ে যাওয়া মায়ের আর্তনাদ। “আমি বেঁচে গেছি, কিন্তু মা আর মামা সেদিনের মতোই থেকে গেছেন সমুদ্রের তলানিতে,” বলেন তিনি, চোখ মুছতে মুছতে।

সেই ঝড় সবচেয়ে বেশি তছনছ করে দিয়েছিল রায়পুর, জুঁইদন্ডী ও বারখাইন গ্রামগুলোকে। প্রতিটি কবর ছিল একটি পরিবার হারানোর গল্প, প্রতিটি নিখোঁজ ছিল একটি ভবিষ্যতের অপমৃত্যু।

  • গহিরা গ্রামের জেবল হোসেন (৫৫) তখন তরুণ। সেই রাতে নিজের পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পেরেছিলেন ঠিকই, কিন্তু চোখের সামনে দেখেছেন অসংখ্য মরদেহ, শূন্য হয়ে যাওয়া পরিবার, ভেঙে যাওয়া জীবন। “আজও সেই দৃশ্য মনে হলে ঘুম হারাম হয়ে যায়,” বলেন তিনি।

তিন যুগ পার হলেও উপকূলের দুঃখ কমেনি। এখনো ভাঙছে বেড়িবাঁধ, অপর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার আর নদীর অব্যাহত ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটে এখানকার মানুষের। রায়পুর ও জুঁইদন্ডীর বহু এলাকায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কবরস্থান পর্যন্ত।

স্থানীয়দের দাবি, “আমরা আর একটি ২৯ এপ্রিল দেখতে চাই না। চাই টেকসই বেড়িবাঁধ, চাই আরও আশ্রয়কেন্দ্র।”

২৯ এপ্রিল এখানকার মানুষের জীবনে শুধুমাত্র একটি তারিখ নয়—এটি একটি ক্ষত, যা উপকূলবাসীর বুকজুড়ে চিরস্থায়ী হয়ে আছে; কবরের পাশে লেখা একটি নিরব আর্তনাদ।