মালকা বানুর উপাখ্যানের জীবন্ত স্মারক আনোয়ারায় ৩৫০ বছরেরও প্রাচীন ‘মনু মিয়া জামে মসজিদ’— খবর আনোয়ারা খবর আনোয়ারা প্রকাশিত: ২:৩৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২৫ স্টাফ রিপোর্টার, খবর আনোয়ারা ‘মালকা বানুর দেশে রে, বিয়ের বাদ্য আলা বাজে রে / মালকার বিয়া হইলো মনু মিয়ার সাথে রে…’—বাংলার লোকসংগীতের এই অমর পংক্তি যেন আজও বয়ে নিয়ে চলছে এক ঐতিহাসিক প্রেমকাহিনি। এই গানের পেছনে থাকা চরিত্রদ্বয়—মনু মিয়া ও মালকা বানু—কে নিয়ে রয়েছে বাস্তব ইতিহাস ও মুগ্ধকর উপাখ্যান। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের শোলকাটা গ্রামে অবস্থিত ‘মনু মিয়া জামে মসজিদ’ আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং প্রেম, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের এক জীবন্ত নিদর্শন। মুঘল আমলের সেনাপতি থেকে মসজিদ নির্মাতাঃ বাংলার সুবাদার ও মুঘল সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র শাহজাদা সুজার সেনাপতি ছিলেন শেরমস্ত খাঁ। তাঁর পুত্র জবরদস্ত খাঁ, যিনি পরিচিত হন মনু মিয়া নামে, ছিলেন চট্টগ্রামের কাট্টলীর জমিদার দেওয়ান বদিউজ্জমানের বোন খোরসা বানুর স্বামী। প্রথম স্ত্রী খোরসা বানু ছিলেন নিঃসন্তান। পরবর্তীতে তিনি বাঁশখালীর সরল গ্রামের মালকা বানুকে বিয়ে করেন, যিনি তিনিও ছিলেন নিঃসন্তান। মনু মিয়ার মৃত্যুর পর মালকা বানু ফিরে যান বাবার বাড়ি বাঁশখালীর সরল গ্রামে। মনু মিয়ার নির্মিত মসজিদটি প্রথম স্ত্রী খোরসা বানুর নামে। ইতিহাসসূত্রে জানা যায়, মুঘল আমলের শেষদিকে নির্মিত এই মসজিদটির বয়স আজ প্রায় ৩৫০ বছর। সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নঃ দীর্ঘ সময় ধরে মসজিদটি সংস্কারবিহীন অবস্থায় থাকলেও ২০১০ সালে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মসজিদটিকে টালিযুক্ত করে সংস্কার করে। বর্তমানে ২০ বাই ৪০ ফুট আয়তনের এই মসজিদটির দেয়ালজুড়ে ও অভ্যন্তরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ। মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ এবং দুই পাশে ছোট আকৃতির কয়েকটি গম্বুজ স্থাপিত আছে, যা মসজিদের স্থাপত্য সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। বর্তমানে এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বে আছেন ফরিদুল হক চৌধুরীর বংশধররা। তাঁরা এটি শুধু ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের জন্যই নয়, স্থানীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে গর্বের সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। শেষ ঠিকানা কাজীর পাহাড়েঃ মনু মিয়ার মৃত্যু হলে তাঁকে সমাহিত করা হয় পাশের কাজীর পাহাড় এলাকায়। তাঁর স্মৃতিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা এই মসজিদ আজও জানান দেয় এক ঐতিহাসিক কালের গল্প। SHARES ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়: