দুই শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী মিয়ার বৈশাখী মেলা স্থগিত; স্মৃতির মাঠে এবার শূন্যতা

প্রকাশিত: ২:২৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২৫

কর্ণফুলী  (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান গ্রামে দুই শতাব্দী ধরে চলে আসা এক প্রাণবন্ত সংস্কৃতির নাম—মিয়ার বৈশাখী মেলা। বৈশাখের শুরুতেই এই মেলাকে ঘিরে জেগে উঠত গোটা জনপদ, প্রাণ ফিরে পেতো মাঠঘাট।
কিন্তু এবারের বৈশাখে আর জমবে না সেই মেলা। শুনা যাবে না শিশুদের কোলাহল, কিংবা নাগরদোলার কড়চা।

 

দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্ভাব্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে, দুই শতাব্দী ধরে চলা এই ঐতিহ্যবাহী মেলা এবার স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেলা উদ্‌যাপন কমিটি।

 

গতকাল মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) মিয়াবাড়ির বংশধরেরা আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর মেলা স্থগিতের বিষয়ে লিখিতভাবে অবহিত করেন।

 

জানা যায়, এই মেলার সূচনা করেন কর্ণফুলী অঞ্চলের প্রভাবশালী জমিদার আন্নর আলী খাঁ। সেই থেকে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখের পর ৭ ও ৮ তারিখে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

 

এই উৎসবকে ঘিরে প্রতি বছর সৃষ্টি হতো উৎসবমুখর পরিবেশ। ঘরে ঘরে আত্মীয় স্বজন আসতেন দাওয়াতে, বসত হরেক রকম পসরা। নাগরদোলা, খেলনা, খাবার আর লোকজ সংস্কৃতির ছোঁয়ায় জমজমাট হতো এলাকা।

 

মেলা স্থগিত রাখার বিষয়ে মিয়াবাড়ির বর্তমান বংশধর শাহাদাত হোসেন খান বলেন—
“আমাদের পরিবারের গৌরবময় এই মেলা দুই শতাব্দী ধরে চলে আসছে। কিন্তু এ বছর আমাদের বিবেচনায় মেলা আয়োজনের অনুকূল সময় নয়। তাই মেলা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সকলের শান্তি ও নিরাপত্তাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

 

তিনি আরও জানান, কেউ যেন জোরপূর্বক মেলার আয়োজন করতে না পারে—সেজন্য প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

 

এই বছর হয়তো মেলার মাঠ থাকবে নিরব, স্মৃতি ঘিরে থাকবে এক ধরনের শূন্যতা। তবে মানুষের মনে বিশ্বাস, আগামীতে আবারও ফিরে আসবে সেই চিরচেনা বৈশাখী ছন্দ, আবারও প্রাণ ফিরে পাবে দুই শতাব্দীর ঐতিহ্য।